কিভাবে একজন নারী/মেয়ে বিপদের সম্মুখীন হলে আত্মশক্তি দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারে বা তাদের আধিপত্যকে দমন করতে পারে ??

আমরা স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় থেকেই মনে করি যে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় শারীরিকভাবে দুর্বল। এমনকি মেয়েরা যখন সবকিছু বোঝার মতো বয়সে পা ফেলে তখন থেকেই তাদের শেখানো হয় নিজেকে গুটিয়ে নিতে, খারাপ ছেলেদের থেকে সাবধান থাকতে, সবার সাথে মিশতে না, ছেলে বন্ধু না বানাতে কারণ পরে ছেলে বন্ধু ক্ষতিকারক হতে পারে, মেয়েদের একা রাস্তায় বের হওয়া ঠিক না। রাতে বাহিরে একা চলাচলে বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করা হয়।
আবার অনেক জায়গায় দেখা যায় মেয়েরা তাদের ইচ্ছানুযায়ী সব ধরনের কাজ করছে, একা একা বিভিন্ন স্থানে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারন যেকোনো শিশুর ক্ষেত্রে সেটা হোক ছেলে বা মেয়ে তাদের সবটাই পরিবেশ, পরিস্থিতি ও পরিবারের ওপর নির্ভর করে।
আমরা সমাজে মেয়েদের জন্য বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকমের পরিবেশ, পরিস্থিতি তৈরি করি। ফলে কিছু মেয়ে অবাধ স্বাধীনতা পায়। আর কিছু মেয়ে দুর্বল সমাজে বেড়ে ওঠে, দুর্বল মন-মানসিকতা ও চিন্তা-ভাবনাকে কেন্দ্র করে।
.
মেয়েরা কি আসলেই আত্মরক্ষায় দুর্বল??
একেবারেই নয়, কারণ মেয়েরা মানসিকভাবে দুর্বল যা তাদেরকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেয়। আমরা প্রতিটি মেয়েই যেমন আমাদের সম্মান রক্ষার্থে সচেতন তেমনি আত্মরক্ষায় যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে যেখানে আমাদের চিন্তাশক্তি দুর্বল, সেখানে আমাদের শারীরিক শক্তি দুর্বল হবেই। আমাদের দুর্বল চিন্তা আমাদের শারীরিক শক্তিকে বাধাগ্রস্ত করে। আর অল্প বয়স থেকেই মেয়েদের মানসিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে পরিবার ও আশেপাশের পরিবেশের বিভিন্ন কর্ম ও আচরণের মাধ্যমে যা মেয়েরা অল্প বয়স থেকেই শেখে। ফলে অনেক মেয়েরাই ভিতূ প্রকৃতির হয়, বিপদের সম্মুখীন হলে অন্য কারো কাছ থেকে সাহায্য আশা করে। যা সবসময় কাম্য নয়। তাই মেয়েদের অল্প বয়স থেকেই মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে এবং এই দায়িত্ব শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের। কারণ প্রতিটি মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল পরিবার। যেখান থেকে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা পাই। পরিবার যদি পাশে থাকে তাহলে যেকোনো কাজই করা খুব সহজ হয়ে যায় তথাপি সেই কাজের জন্য প্রয়োজন সৎ ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা। যা আমাদের কাজে সফল হতে সাহায্য করে।
.
কীভাবে মেয়েরা যেকোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নিজেদের রক্ষা করতে পারে ?
মেয়েরা সাধারণত জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হয়। কিন্তু প্রকাশ করতে ভয় পায়। এভাবেই একসময় ভয় তাদের মধ্যে গেঁথে যায়। সেই ভয় তাদের দুর্বল করে যার ফলে অনেক জঘন্য অপরাধের শিকারও হতে হয় । তাই, মেয়েদের উচিত তাদের সম্মান রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে নিজেদের প্রস্তুত করা। যাতে তারা কোনো বিপদে ভয় না পেয়ে লড়াই করতে পারে।
যেমন:
❏ বিপদে পড়লে ভয় কে আড়াল করে উপস্থিত বুদ্ধির সাহায্যে উত্তরনের চেষ্টা।
❏ উত্তেজিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা।
❏ বিপদে ফেলা ব্যক্তিদের কাছে ভয় পাওয়াটা প্রকাশ না করা।
❏ সাহসের সাথে লড়াই করার মনোবল তৈরি করা।
❏ যতটুকু সম্ভব জনবল যেখানে বেশি সেখান দিয়ে চলাচল করা।
❏ হাতের কাছে বা আশেপাশে আঘাত করার মতো ভারী কিছু থাকলে তা ব্যবহার করা।
❏ বিপদে লড়াই করার কিছু সহজ কৌশল শিখে রাখা।
❏ ক্যারাটে ও মার্শাল বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা।
❏ যদি প্রশিক্ষন নেওয়ার সুযোগ না থাকে তাহলে ঘরে বসে অনলাইনে বা টেলিভিশনের মাধ্যমে লড়াইয়ের কৌশল আয়ত্ত করা।
এসবের মাধ্যমে যেকোনো মেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
মেয়েরা যদি মার্শাল আর্টিস্ট বা পেশাদার কিক বক্সার হয় তাহলে তাদের জন্য কতটা লাভ হবে??
আত্মরক্ষার জন্য প্রতিটি মেয়েকে মার্শাল আর্ট বা ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। যাতে বিপদে পড়লে একজন মেয়ে নিজেকে এবং অন্যদের সাহায্য করতে পারে। যখন একটি মেয়ে বিপদে পড়ে, তখন সে অন্য কারো কাছ থেকে সাহায্যের আশা করে কারণ মেয়েরা দুর্বল। কিন্তু একজন ক্যারাটে বা মার্শাল প্রশিক্ষিত মেয়ে বিপদে পড়লে তার বুদ্ধিমত্তা, আত্মবিশ্বাস, শিক্ষন তাকে সেই বিপদ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফলে যারা বিপদে ফেলতে পারে তারাই পরবর্তীতে মেয়েটিকে আবার কোনো বিপদে ফেলতে ভয় পাবে। এমনকি সবসময় দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করবে। সব মেয়েরাই যখন নিজেকে এভাবে তৈরি করবে, তখন মন্দ ও বাজে ব্যক্তিরা মেয়েদের সাথে অপরাধ করার সাহস পাবে না, এমনকি মেয়েদেরও অপরাধের শিকার হতে হবে না। এভাবেই একসময় মেয়েরা আত্মরক্ষায় সফল হতে পারবে।
যেমন : বলা যায় একটা নারী/মেয়ে যিনি হল একজন প্রশিক্ষিত মার্শাল আর্টিস্ট বা একজন পেশাদার কিক বক্সার। যখন রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলো তখন বিপদে পড়লো। যার কারন কয়েকজন গুন্ডা, যারা কুমতলব নিয়ে পথ আটকিয়েছে এবং ভাবছে যে মেয়েটির সাথে তাদের ইচ্ছানুযায়ী আচরন করবে কিন্তু গুন্ডা গুলো এটা জানতো না যে মেয়েটি প্রশিক্ষিত মার্শাল আর্টিস্ট। ফলে যখন গুন্ডারা মেয়েটির সাথে খারাপ আচরন করে এবং ক্ষতি করতে চায় তখন মেয়েটি ভয় না পেয়ে নিজের আত্মরক্ষার জন্য তার শেখা টেকনিকস গুলো ব্যবহার করে তাদের সাথে একাই লড়াই করে তাদের উচিত শিক্ষা দেয়। এমনকি মেয়েটির হাতে মার খেয়ে কারো হাত, কারো পা, কারো কোমর ভেঙে যায়। গুন্ডারা বুঝতে পারে মেয়েটির ক্ষতি করা খুব একটা সহজ নয়। কারন মেয়েটি নিজের নিরাপত্তার জন্য এবং যেকোনো বিপদে আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষন প্রাপ্ত এবং সবসময় প্রস্তুুত।
.
যখন মেয়েটি গুন্ডাদের সাথে লড়াই করছিলো তখন আশেপাশের অনেকেই দারিয়ে দেখছিলো তবে কেউই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। তাই সবসময় মনে রাখতে হবে যে বিপদে পড়লে সবচেয়ে বড় সাহায্য আমরা নিজে থেকে পাই। অন্য কারো কাছ থেকে সাহায্যের আশা করা বৃথা।
সমাজে এমন অনেক মেয়ে আছে যারা এসব বিপদে নিজেদের রক্ষা করার জন্য দক্ষ বা প্রশিক্ষিত নয়। যার কারণে প্রতিনিয়ত বেশির ভাগ মেয়েই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং বিভিন্ন জঘন্য অপরাধের শিকার হচ্ছে। এতে তাদের পরিবার ও সমাজ থেকে নানা কটু কথা শুনতে হয় অপমানিত হতে হয় । যার কারণে মেয়েরা বিপথে চলে যায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এভাবেই অনেক মেয়ে ও তাদের পরিবারের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। পতন হয় সুন্দর ভবিষ্যৎ, ইচ্ছা, আকাঙ্খার। তাই অন্যের কাছ থেকে কোনো সাহায্যের কথা না ভেবে আত্মরক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা ও পরিবারের উচিত ছোট থেকেই শিশুদের আত্মরক্ষা সম্পর্কে শেখানো।
পরিশেষে বলা যায় ...
মেয়েরা দুর্বল নয় দুর্বল তাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি, যার ফলে তারা সব ক্ষেত্রেই নিজেকে দুর্বল ও অসহায় অনুভব করে। তবে মেয়েরা চাইলেই নিজেকে যেকোনো বিপদ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। যদিও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় শারীরিকভাবে শক্তিশালী নয়, তবুও তারা তাদের আত্মসম্মান রক্ষার্থে যথেষ্ট শক্তিশালী। সব মেয়েদের যদি তাদের আত্মসম্মান রক্ষা করার কৌশল শেখানো হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যখন কোনো মেয়ে বিপদে পড়বে, তখন সে নির্ভয়ে লড়াই করতে পারবে আসন্ন যেকোনো বিপদের সম্মুখীন হয়ে এমনকি আত্মরক্ষাও করতে পারবে।