বীমা কী ? বীমা কোম্পানি কী ? এটি কি কি কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ? বাংলাদেশের সেরা পাঁচটি বীমা কোম্পানি
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি । তবে এর তুলনায় তেমন কাজ নেই বললেই চলে । তবুও মানুষ জীবন যাপনের তাড়নায় কোনো না কোনো ভাবে পরিবার ও নিজেদের জন্য উপার্জন করার চেষ্টা করে যাতে অভুক্ত না থাকতে হয়। কিন্তু এতো সমস্যার মাঝেও বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক জনগনকে কিছু অর্থের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা প্রদান করার মতো নির্দেশনা রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির।
তাই আজ আমরা এক ধরনের কোম্পানি সম্পর্কে জানবো এই কন্টেন্টির মাধ্যমে ।
কোম্পানি কি ?
কোম্পানি হলো একটি আইনি সত্তা যা আইনগত সকল নিয়ম মেনে বিভিন্ন ব্যবসা-বানিজ্য ও শিল্পের জন্য পরিচালিত একটি সংস্থা। কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পের পরিচিতি উঠে আসে জনসাধারনের কাছে। যা মানুষের জীবন যাপনে সহায়তা করতে সক্ষম।
বাংলাদেশে বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে যার মাধ্যমে জনগন সেবা গ্রহন করে থাকে এবং কোম্পানির পরিচালক গন অর্থের বিনিময়ে সেবা প্রদান করে। কিন্তু কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন আইন মেনে কাজ করা কোম্পানির দায়িত্ব। সেই আইন অনুযায়ী কাজের ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে কোম্পানি গুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। তার মধ্যে একটি হলো বীমা কোম্পানি।
বীমা কি ?
বীমা হলো আর্থিক ক্ষতিপূরনের এমন একটি উপায় যার দ্বারা আসন্ন অজানা বা অপ্রত্যাশিত আর্থিক ক্ষতিতে সুরক্ষা প্রদান করে। যখন কেউ বীমা কোম্পানির সেবা গ্রহনের পদক্ষেপ গুলো ভবিষ্যতের জন্য নিয়ে রাখে। অতঃপর যদি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো আর্থিক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় তখন বীমা কোম্পানি কর্তৃক সেই দুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য অর্থ প্রদান করে।
বাংলাদেশে অনেক ধরনের বীমা কোম্পানি রয়েছে। এবং এদের প্রদানকৃত সেবার মধ্যেও ভিন্নতা রয়েছে তাই আজ আমরা বাংলাদেশের পাচঁটি বীমা কোম্পানি সম্পর্কে জানবো তাছাড়া এই পাচঁটি বীমা কোম্পানির সেবা কিরুপ, সেবার ধরন, সেবা কিভাবে গ্রহন করা যায়, এসব সম্পর্কেও আলোচনা করবো।
বাংলাদেশে কয়টি বীমা কোম্পানি রয়েছে ?
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ৩টি বীমা কোম্পানি আবির্ভূত হয় যেমন :
- জীবন বীমা ।
- সাধারন বীমা ।
- বিদেশী বীমা ।
৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে বেসরকারি খাতের বীমা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ভাবে শিল্প খাতে প্রবেশ করতে শুরু করে এবং এটি প্রসারিত হতে থাকে। বর্তমানে, দেখা যায় বীমা আইন 2010 এর অধীনে কাজ করছে মোট 62টি কোম্পানি ।
বাংলাদেশে কোন কোন ধরনের বীমা কোম্পানি রয়েছে ??
বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলোর ধরন নিম্নরুপ :
- জীবন বীমা ।
- সাধারণ বীমা ।
- পুনর্বীমা ।
- মাইক্রো বীমা ।
- তাকাফুল বা ইসলামী বীমা।
সেরা পাঁচটি বীমা কোম্পানির নাম, সেবা ও ধরন উল্লেখ করা হলো :
পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড..
এই বীমা কোম্পানিটি বিভিন্ন প্রত্যক্ষ সুবিধা প্রদান করে থাকে জনগনদের যার ফলে বাংলাদেশে এই বীমা কোম্পানি বিপুল পরিমানে আস্থা অর্জন করেছে। এমনকি অনেকেই এই কোম্পানিতে কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে। এই কোম্পানির কাজ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া রয়েছে ।
তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড…
যদি আপনি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বীমা সুবিধা গ্রহন করতে চান তবে এই তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আপনাকে সেই সুবিধা দিতে পারে। এই কোম্পানিটি মূলত ইসলামীক দৃষ্টিকোন থেকে পরিচালিত করা হয়। তাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম পরিবারের কাছ থেকে এই কোম্পানিটি অনেক সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করছে।
পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড..
এই কোম্পানিটি জীবন-ভিত্তিক বীমার উপর তাদের সকল প্রকার স্কিম জনসাধারনের নিকট প্রেরন করে। যার যে স্কিমটা পছন্দ সে অনুযায়ী সেবা গ্রহন করে।
প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড..
এই কোম্পানিটি সকলকে অ-জীবন ভিত্তিতে তার আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে যার ফলে এটিকে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বলেও অভিহিত করা হয়।
যারা এই কোম্পানি থেকে স্কিম ক্রয় করে সেগুলো এরকম হয় যেমন : মেশিন জাতীয় বীমা, দুর্ঘটনা জাতীয় বীমা, গৃহ জাতীয় বীমা, কারখানা-ভিত্তিক বীমা এবং অন্যান্য।
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড..
এই কোম্পানিটি বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে গ্রাহক নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য প্রতিষ্ঠিত করা হয় তাছাড়া অন্যান্য উন্নয়ন মূলক কাজের জন্যও এটি বেশ ভালো সেবা প্রদান করে । এমনকি সমাজের ক্ষুদ্রতম পরিবারের পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সমস্ত ধরণের লোকের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যও এটিকে একটি সফল বীমা কোম্পানিতে পরিনত করে।
বীমা করা কেন প্রয়োজন?
বীমা কোম্পানি গুলো বীমা সংক্রান্ত সেবা গুলো বীমা কারী ব্যক্তি, ব্যক্তির অবর্তমানে ব্যক্তির পরিবার এবং বীমা কারী প্রতিষ্ঠানকে এক ধরনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। যখন বীমা কারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো দুর্ঘটনার কবলে পড়বে তখন সেটার ক্ষতিপূরন হিসেবে বীমা কোম্পানি কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করবে। মূলত এটাই বীমা কোম্পানির পলিসি। তাছাড়া বীমা কোম্পানি থেকে বিভিন্ন সেবা যেমন : জরুরি অবস্থায় চিকিৎসা, অসুস্থতার সংকোচন এবং চিকিৎসা এমনকি ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য অর্থ প্রদান করে বীমা কোম্পানিগুলো।
কোন বীমাগুলো করা প্রত্যেকেরই প্রয়োজন ?
➡ জীবন বীমা ।
➡ স্বাস্থ্য বীমা ।
➡ স্বয়ং বীমা ।
➡ দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতা বীমা ।
জীবন বীমা ..
জীবন বীমা মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারবেনা তবে জীবন ঘটে যাওয়া আর্থিক দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার করতে পারবে। এটির সবচেয়ে সুন্দর সুবিধা হচ্ছে আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবার এর পুরো সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
স্বাস্থ্য বীমা..
আপনি যদি কোনো বীমা কোম্পানি থেকে স্বাস্থ্য বীমা ক্রয় করে থাকেন। তাহলে পরবর্তীতে স্বাস্থ্যগত যেকোনো ঝুঁকি হলে বা কোনো চিকিৎসা যা খুব ব্যয়বহুল আপনি সেটা বহনে অক্ষম এরকম সময়ে একমাত্র স্বাস্থ্য বীমার সাহায্যে আপনি এই অবস্থা থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে উত্তরন করতে পারেন।
স্বয়ং বীমা..
আমরা অনেক সময় দেখি যে রাস্তায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে তখন যে যানবাহন গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেটাকে বেকাপ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থা বা জনগনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরন সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু সেই যানবাহনের যাত্রীরা যে পরিমান ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার ক্ষতিপূরন একমাত্র তার পরিবার বহন করে। তাই অন্যান্য বীমা ক্রয় করা না থাকলেও স্বয়ং বীমা ক্রয় করে রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাহলে এরকম দুর্ঘটনায় স্বয়ং বীমা সাহায্য করতে পারবে।
দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতা বীমা..
আমরা যখন চাকুরি বা ব্যবসায়ে নীয়োজিত থাকি তখন সব ব্যাপারে বা কাজে আমাদের সক্ষমতা কতটুকু সেটা উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু আমাদের সবার জীবনে এমন কিছু সময় আসে যখন আমরা সব কাজের জন্যই অক্ষম হয়ে যাই। এক সময় আমাদের বৃদ্ধ হয়ে যেতে হয় তখন অন্য কারো ভরসায় জীবন পরিচালিত হয়। তখনই এই দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতা বীমা আমাদের সাহায্য করতে পারে। যদি আমরা সময় থাকা অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতা বীমা ক্রয় করে রাখি।
বীমা কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কিভাবে অর্থ উপার্জন করে ?
বীমা কোম্পানি গুলো মূলত দুটি উপায়ে অর্থ উপার্জন করে থাকে।
1. বীমা কভারেজের বিনিময়ে প্রিমিয়ামের উপর চার্জ ধার্য করা। এবং
2. এই প্রিমিয়াম গুলোকে সুদ উৎপাদিত হবে এমন সম্পদের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো অর্থাৎ পুনঃবিনিয়োগ করা।
সব ধরনের ব্যবসার মতোই বীমা কোম্পানিগুলো অর্থের বাজারজাত করার চেষ্টা করে ও কোম্পানির প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস করে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায়, বীমা যেকোনো মানুষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। কেননা অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা গুলোকে যেহেতু আমরা আটকাতে পারবো না সেহেতু দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর আর্থিক সহায়তা লাভ করা যায় এমন পলিসি একমাত্র বীমা কোম্পানি করতে পারে।