ওমিক্রন কি? Omicron এর উপসর্গ কি? ওমিক্রন এর নতুন উপসর্গ কি কি?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে নতুন অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য যেন সব দেশ প্রস্তুত থাকে।
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ডাব্লিউএইচও-র আঞ্চলিক ডিরেক্টার ড. তাকেশি কাসাই বলেছেন বিভিন্ন দেশ থেকে কোভিড-১৯-এর অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেছেন যে খবর এই মুহূর্তে আমরা পাচ্ছি, প্রকৃত চিত্র তার থেকেও ব্যাপক- “ভৌগলিকভাবে তা ইতোমধ্যেই অনেক বেশি ছড়িয়ে গেছে”।
অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকে করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ আসার সম্ভাবনার জন্য সব দেশকে তৈরি থাকতে বলেছেন ড. কাসাই। তিনি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে যেসব শিক্ষা আমরা পেয়েছি নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় তা কাজে লাগাতে হবে।
ওমিক্রন সম্পর্কে আমরা এপর্যন্ত কী জানি?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের নাম দিয়েছে অমিক্রন। গ্রিক বর্ণমালার আলফা, ডেল্টার মতোই নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের কোড-নেম ঠিক করা হয়েছে।
এই ভ্যারিয়েন্টটি মিউটেট বা তার রূপ পরিবর্তন করেছে অনেকভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলছেন, এই ভ্যারিয়েন্টটি “অনেক অস্বাভাবিকভাবে মিউটেট” করেছে এবং এখন পর্যন্ত অন্য যেসব ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে তার চেয়ে এটি “অনেকখানিই আলাদা।”
“এটা আমাদের খুব অবাক করেছে,” বলছেন তিনি, “বিবর্তনের জন্য এটা বড় বড় ধাপ পার হয়েছে। (কোভিড জীবাণুতে) আমরা সাধারণত যে ধরনের মিউটেশন দেখি এর মধ্যে সেটা অনেক বেশি।”
এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডি অলিভিয়েরা জানিয়েছেন, অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মিউটেট করেছে ৫০ বার। আর এর স্পাইক প্রোটিন বদলেছে ৩০ বার। মানুষের দেহের মধ্যে ঢুকতে কোভিড ভাইরাস এই স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে। এবং করোনার ভ্যাকসিন সাধারণত এই স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়।
ভাইরাসের যে অংশটি প্রথম মানুষের দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায় তার নাম রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন। অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সেই রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইনে মিউটেশন ঘটিয়েছে ১০ বার। সেই তুলনায় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এই পরিবর্তন হয়েছে মাত্র দু’বার।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ধরনের মিউটেশন সম্ভবত একজন রোগীর দেহের জীবাণু থেকে এসেছে, যিনি এই ভাইরাসের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে পারেননি।
তবে ভাইরাসের সব মিউটেশনই খারাপ না। এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে এসব মিউটেশনের ফল কী দাঁড়ায়।
তবে শঙ্কার কথা হলো চীনের উহানে করোনার প্রথম যে জীবাণুটি দেখা গিয়েছিল তার তুলনায় এই ভাইরাস এখন অনেকখানিই ভিন্ন। এর মানে হলো, কোভিডের মূল স্ট্রেইনকে মাথায় রেখে তৈরি করা ভ্যাকসিন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর নাও হতে পারে।
কোভিডের অন্য সব ভ্যারিয়েন্টে যেসব মিউটেশন লক্ষ্য করা গেছে সেসব দিয়ে হয়তো এই ভ্যারিয়েন্টের ভবিষ্যৎ রূপান্তর সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলছেন, “এই ভাইরাসটির সংক্রমণের ক্ষমতা, এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা -এসব আমাদের শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও সম্ভবত এর রয়েছে।”
তবে কোভিডের অনেক ভ্যারিয়েন্ট গবেষণাগারে বিপজ্জনক বলে মনে হলেও পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে বেটা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সবাই দুর্ভাবনায় ছিলেন। কারণ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদ করতে এর কোন জুড়ি ছিল না। কিন্তু পরে দেখা গেল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর চেয়েও দ্রুত গতিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
“বেটা ভ্যারিয়েন্ট শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করতে পারতো। আর কিছু না। ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা ছিল বেশি। আর ইমিউন সিস্টেমকে এড়াতেও পারতো মোটামুটি,” বলছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা, “কিন্তু এটা (ওমিক্রন) দুই দিক থেকেই সমান পারদর্শী।”
গবেষণাগার থেকে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে ঠিকই, কিন্তু এর সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন রয়েছে তার জবাব মিলবে বাস্তব পরিস্থিতি থেকে।
এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে এখনই কোন উপসংহারে পৌঁছানো যাবে না। কিন্তু যেসব ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গাওটেং প্রদেশে। বোতসোয়ানায় পাওয়া গেছে চারটি কেস। এবং হংকংয়ে পাওয়া গেছে একটি কেস। ইসরায়েল এবং বেলজিয়ামেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
এই ভাইরাসটি যে আরো অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সে সম্পর্কেও কিছু সূত্র পাওয়া যাচ্ছে।
কোভিডের সাধারণ পরীক্ষায় এই ভ্যারিয়েন্টের ফলাফল কিছুটা বিচিত্র দেখতে হয়, ল্যাবরেটরির ভাষায় যাকে বলে ‘এস-জিন ড্রপ আউট’। ফলে এই বৈশিষ্ট্যে জন্যই পূণার্ঙ্গ জিন বিশ্লেষণ না করেও হয়তো এটি কীভাবে, কোথায় ছড়িয়ে পড়ছে সেটা জানা সম্ভব হবে।
এর অর্থ দাঁড়ায় গাওটেং প্রদেশের ৯০% রোগীর দেহে সম্ভবত এই ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে এবং “দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য প্রদেশেও” হয়তো এটি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকেও এটি বেশি দ্রুততায় ছড়ায় কিনা, এর সংক্রমণের প্রভাব কতটা মারাত্মক কিংবা ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এটি ভেদ করতে পারে কিনা সে সম্পর্কে এখনও কোন তথ্য জানা যাচ্ছে না।
দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ২৪% কোভিড টিকার আওতায় এসেছে। এর চেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে যেসব দেশে সেখানে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আদৌ ছড়িয়ে পড়বে কিনা, সেই প্রশ্নেরও কোন জবাব হাতে নেই।
ফলে এখন পর্যন্ত যেটুকু আমরা জানি তা হলো এর সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা অনেক কম, কিন্তু এর বৈশিষ্ট্য দেখে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এবং গভীরভাবে এর ওপর নজর রাখতে হবে।
তবে করোনা মহামারির একটা বড় শিক্ষা হলো: সব প্রশ্নের জবাব জানার জন্য অপেক্ষা করার মতো যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে নেই।
ওমিক্রন কতটা বিপজ্জনক
এক চেনা উদ্বেগ আমাদের মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে – আর তা হলো করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট – অমিক্রন।
সর্বশেষ এই ভ্যারিয়েন্টটি কোভিড জীবাণুর সবচেয়ে বেশি মিউটেট হওয়া সংস্করণ। এর মিউেটশনের তালিকা এত দীর্ঘ যে একজন বিজ্ঞানী একে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন। অন্য এক জন বিজ্ঞানী আমাকে বলেছেন, তার দেখা অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে অমিক্রনই সবচেয়ে মারাত্মক।
এই ভ্যারিয়েন্টটি মাত্রই তার যাত্রা শুরু করেছে, যদিও এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে এটি অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।
এমুহূর্তে সবার মনে প্রশ্ন: ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কত দ্রুত ছড়াতে পারবে, এটি কি ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকে ভেদ করতে পারবে? তেমন হলে এর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যাবে?
এসব প্রশ্ন নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে, কিন্তু এর কোন পরিষ্কার জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।
Omicron এর উপসর্গ কি?
এখনও অবধি দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের দ্বারা সংক্রামিত বেশিরভাগ লোক অল্পবয়সী এবং তাদের লক্ষণগুলি মৃদু ছিল।
ডেল্টার থেকে ওমিক্রনের উপসর্গের কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন – শরীরে ব্যাথা, স্বাদ-গন্ধ অবিকৃত থাকা,তবে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা খুব মুশকিল ।
এই মুহুর্তে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে ওমিক্রনের লক্ষণগুলি অন্যান্য রূপগুলির থেকে আলাদা হওয়ার কোনও প্রমাণ নেই৷
তার মানে কাশি, জ্বর এবং স্বাদ বা গন্ধ হারানো- এখনও প্রধান এই তিনটি উপসর্গের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার হাসপাতালগুলি আরও গুরুতর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখছে- যদিও তাদের অনেকেই টিকা নেয়নি বা শুধুমাত্র একটি ডোজ নিয়েছে।
এর দ্বারা এই বোঝা যায় যে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ এবং একটি বুস্টার ডোজ অন্যান্য ভ্যারিয়ান্টগুলির মতোই এই নতুন ভ্যারিয়ান্ট থেকে আমাদের সুরক্ষা দিতে পারে ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম মাথাচাড়া দেবার পর এবার যুক্তরাজ্যেও করোনা ভাইরাসের নতুন রূপ ওমিক্রনের দেখা মিলেছে।
Omicron সনাক্ত করতে কি পরীক্ষা করা হয়?
পিসিআর টেস্ট মারফত সোয়াব সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের জন্য একটি ল্যাবে পাঠানো হয়, কোনো ব্যক্তি করোনা ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত কিনা তা এই পরীক্ষা মারফত জানা যায়।
সোয়াব বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পারেন যে সংক্রমণের কারণটি ডেল্টা বা ওমিক্রন বা অন্য কিছুর মতো দেখাচ্ছে কিনা।
যুক্তরাজ্যের এক তৃতীয়াংশ ল্যাবে এই ধরণের বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সনাক্তকরণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়।
উপসর্গ দেখা দিলে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে অথবা কোনো বেসরকারি কোম্পানি থেকে পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে ।
জিনোমিক সিকোয়েন্সিং নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সম্পূর্ণ জেনেটিক বিশ্লেষণের পর পিসিআর পরীক্ষার ফলাফলগুলি দেখে শনাক্ত করা হয় ভ্যারিয়ান্টটি ওমিক্রন কিনা।
NHS টেস্ট-এর মত ট্রেসিং সিস্টেমের মাধ্যমেও জানা যায় কোনো ব্যক্তি এই নতুন ভ্যারিয়ান্টটির দ্বারা আক্রান্ত কিনা
সম্ভবত যুক্তরাজ্যে ইতিমধ্যেই ভেরিয়েন্টের আরও অনেক কেস রয়েছে, যা এখনও শনাক্ত করা যায়নি। কারণ এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
তবে করোনভাইরাসটির প্রভাবশালী রূপটি এখনও ডেল্টা, যার দ্বারা যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন ।
পার্শ্বীয় প্রবাহ পরীক্ষা কি ওমিক্রন শনাক্ত করে?
দ্রুত বা পার্শ্বীয় প্রবাহ পরীক্ষা বাড়িতেই করা যায়। এর দ্বারা আপনি বুঝতে পারবেন আপনি করোনা ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন কিনা। কিন্তু এই পরীক্ষা মারফত এটা জানা যায় না আপনি করোনার কোন ভেরিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত।
ওমিক্রন এবং অন্যান্য ভেরিয়েন্টগুলির মধ্যে পার্থক্য কি?
ওমিক্রন ভেরিয়েন্টে অনেকগুলি মিউটেশন দেখা গেছে যা আগে মেলেনি। তাদের মধ্যে একটি বড় সংখ্যক ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন রয়েছে, যা বেশিরভাগ ভ্যাকসিনের টার্গেট এবং এটিই প্রধান উদ্বেগের বিষয়।
স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষায়, ওমিক্রন “এস-জিন ড্রপআউট” নামে পরিচিত (যা ডেল্টার থেকে আলাদা ) এবং এর থেকেই বোঝা যায় এটি করোনার সম্পূর্ণ নতুন একটি রূপ।
তবে এটাও ঠিক সমস্ত “এস-জিন ড্রপআউট” ওমিক্রন হবে না – নিশ্চিত হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ জিনোমিক সিকোয়েন্সিং প্রয়োজন।
জিনোমিক সিকোয়েন্সিং কি ভূমিকা পালন করে?
ইউকে-তে প্রতি সপ্তাহে কোভিড পজিটিভ পরীক্ষার ফলাফল থেকে ৬০ হাজারটি কেস (২০%) জিনোমিক সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয়।
প্রদত্ত জেনেটিক উপাদানগুলি ঘনিষ্ঠভাবে দেখে, বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করতে পারেন যে কেউ ওমিক্রন বা ডেল্টার দ্বারা আক্রান্ত কিনা।
এই প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র সোয়াব বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রদান করে- তবে এর ফলাফল দেখে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন নতুন ভ্যারিয়ান্টটি কি অনুপাতে ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রভাগে রয়েছেন, যে কারণে এই দেশগুলিতে বেশিরভাগ নতুন রূপ শনাক্ত করা হয়েছে।
ওমিক্রন আক্রান্তদের দেহে উপসর্গ কতটা গুরুতর?
সারা পৃথিবীতে এখন দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি অন্তত ৩২টি মিউটেশন (জিনগত গঠনের পরিবর্তন) ঘটিয়েছে – যার বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯।
ওমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো: এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়াতে পারে – যার ফলে এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
করোনাভাইরাস যত সহজে ছড়াবে, ততই তাতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি হবে – আর এর ফলে কোভিড-১৯এ গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যাও ততই বাড়তে থাকবে।

প্রাথমিক তথ্য প্রমাণে আরো দেখা গিয়েছে যে ওমিক্রনে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে। অর্থাৎ যারা আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন – তাদের সাধারণত দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবার দৃষ্টান্ত কম হলেও – ওমিক্রনের ক্ষেত্রে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। তারা এখন কতটা নিরাপদ – তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ফাইজার, এ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোভ্যাক, স্পুটনিক – এসব টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে?
এগুলোই ওমিক্রন নিয়ে ভয়ের কারণ। বলা দরকার যে ভাইরাস সবসময়ই পরিবর্তিত হচ্ছে, প্রতিনিয়ত মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন রূপ নিচ্ছে।
চীনের উহান শহরে প্রথম যে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল, সেই ভাইরাস এখন আর নেই। ডেল্টা আর বেটা ভ্যারিয়েন্ট তাকে হটিয়ে দিয়েছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশন ছিল ১০টি আর বেটায় ৬টি। আর ওমিক্রনের ‘ইউনিক’ মিউটেশনের সংখ্যা এর অনেক বেশি – মোট ২৬টি। এতেই বোঝা যায় একে মোকাবিলা করা কত কঠিন হতে পারে।
“ওমিক্রনের উপসর্গ অত্যন্ত মৃদু”
ওমিক্রন ভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয় গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকায়। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই এতে আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হয়েছে পৃথিবীর অন্তত ১১টি দেশে।
এটি বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যখন নানা দেশ নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার ডাক্তাররা বলছেন, এখন পর্যন্ত ওমিক্রন নামের কোভিডের এই নতুন ধরনটির সংক্রমণে রোগীদের মধ্যে খুবই মৃদু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রধান এ্যানজেলিক কোয়েৎজি বিবিসিকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত সেদেশে কেসের সংখ্যায় সামান্য বৃদ্ধি ঘটেছে – কিন্তু ওমিক্রনে আক্রান্তদের অধিকাংশেরই হাসপাতালে চিকিৎসা নেবার দরকার হয়নি।
তিনি আরো বলেন, হয়তো এর লক্ষণ অত্যন্ত মৃদু বলেই এই নতুন ধরনটি এতদিন শনাক্ত হয়নি।
বিবিসিকে রোববার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মিজ কোয়েৎজে বলেন, প্রথম যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পাই সে একজন পুরুষ, বয়স ছিল ৩০এর কোঠায়। এবং সে দু’দিন ধরে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করার কথা বলছিল।
“তার সাথে গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা। তবে কোন কাশি ছিল না বা স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলাও ছিল না। এরকম লক্ষণ আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হওয়াতে আমি তার টেস্ট করাই। তাতে সে এবং তার পরিবারের সবাই পজিটিভ ধরা পড়লেও পরিবারের অন্যরা ভালো ছিল। সেজন্যই আমি বলছি মৃদু উপসর্গ।”
“এর পর একদিনে আমি আরো কয়েকজন রোগী দেখি। তারাও সবাই পজিটিভ ছিল। এর পরই আমি টিকা সংক্রান্ত সরকারি কমিটিকে সতর্ক করি, যার সদস্য আমি নিজেও।”
“আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় যা দেখছি তা হলো সংক্রমিত সবারই লক্ষণ আমাদের বিবেচনায় অত্যন্ত মৃদু। আমরা কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি করাইনি। আমি অন্য একজন সহযোগী ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি। তিনিও একই চিত্র তুলে ধরেছেন।”
মিজ কোয়েৎজি অবশ্য বলছেন, যদিও এখন পর্যন্ত ওমিক্রন আক্রান্তদের উপসর্গ খুবই মৃদু বলে দেখা যাচ্ছে – কিন্তু দু সপ্তাহ পর হয়তো এ চিত্রটা বদলে যেতে পারে।
ওমিক্রন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন দেশ তড়িঘড়ি করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা এর সমালোচনা করেছেন। তারা অভিযোগ করছেন যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি আবিষ্কার করার জন্য, দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাধুবাদ দেয়ার পরিবর্তে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে ।
ওমিক্রন কতটা মারাত্মক সে চিত্রটা এখনো স্পষ্ট নয়
দক্ষিণ আফ্রিকার আরো কয়েকজন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে – ওমিক্রনে ঠিক কতটা গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে সে চিত্রটা এখনো পরিষ্কার নয়।
একজন ডাক্তার জানাচ্ছেন, প্রথমদিকে আক্রান্তদের লক্ষণ ছিল মৃদু। আরেকজন ডাক্তার বলেছেন, তিনি তরুণ-বয়স্ক কিছু রোগী দেখেছেন যাদের মাঝারি থেকে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল।
আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটির ফ্যাকাল্টি সদস্য এ্যালেক্স সিগাল ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, “এখনই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোটা ভুল হবে, তবে বলা যায় যে আমরা আগে যা দেখেছি, এটা তার চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে না।”
“এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু করবে এমন কোন ইঙ্গিত এখনো নেই” – বলেন তিনি।
বৈশ্বিক ঝুঁকি অত্যন্ত উঁচু
বাস্তবতা হচ্ছে – ওমিক্রন কতটা মারাত্মক রূপ নিতে পারে – এ সম্পর্কে এখনো খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন তার ফলাফল পেতে আরো দুই-তিন সপ্তাহ লাগবে।
এর মধ্যে প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে ওমিক্রন-আক্রান্ত ব্যক্তি খুঁজে পাবার খবর বেরুচ্ছে।
বিভিন্ন দেশ – যারা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল, বা করতে যাচ্ছিল – তারা এখন নতুন করে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, মাস্ক পরা ও জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে নানা নির্দেশ কার্যকর করছে।
এসব দেশের সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, ওমিক্রন কতটা বিপজ্জনক হতে পারে সম্পর্কে আরো তথ্য জানার জন্য তারা আগেভাগে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে সময় নিচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোববার দেয়া তাদের বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই বলেছে, ওমিক্রনের সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অত্যন্ত উচ্চ।
‘টিকা অন্তত কিছুটা কার্যকর হবে‘
দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত সীমিত নমুনার ভিত্তিতে ডাক্তাররা দেখেছেন যে ‘ব্রেক-থ্রু ইনফেকশন’ – অর্থাৎ যারা ইতোমধ্যেই টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ওমিক্রন আক্রান্ত হবার হার – বেশি বলে দেখা গেছে।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং কোভিড সংক্রান্ত সরকারি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ইয়ান সানে বলছেন, প্রাথমিক উপাত্তে ভ্যাকসিন এখনো কার্যকর বলেই দেখা যাচ্ছে – কারণ যারা হাসপাতালে আছেন, তাদের অধিকাংশই টিকা না-নেয়া রোগী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন এর কার্য়কারিতা কমে গেলেও টিকা যে পুরোপুরি অকার্যকর হবে তা নয় – খানিকটা কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
তাই তারা বলছেন, ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে টিকা নেয়া, মাস্ক পরা, এগুলোই সবচেয়ে ভালো উপায়।
অমিক্রনের নতুন উপসর্গ
বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীরা নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে নানা ধরনের গবেষণার চালাচ্ছেন।
এর মধ্যেই কেউ কেউ ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে এই ভ্যারিয়েন্টে কিছুটা ভিন্ন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
অমিক্রনে ব্যথা-বেদনার কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তবে স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি চলে যাবার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। তবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন তারা এখুনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত মতামত দিতে চাইছেন না।
এই মুহূর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হল, অমিক্রনের উপসর্গগুলো কোভিড-১৯এর অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট-এর উপসর্গ থেকে যে খুব আলাদা তার পক্ষে তথ্যপ্রমাণ বিজ্ঞানীরা এখনও পাননি।
ফলে, নতুন করে কাশি, জ্বর এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়াকেই এখনও কোভিড আক্রান্ত হবার প্রধান তিনটি উপসর্গ হিসাবে তারা গণ্য করছেন।
ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঁচের কম বয়সীদের তুলনামূলকভাবে বেশি অসস্থ হয়ে পড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রন কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ সারা বিশ্বের সরকারগুলো এখন তা বোঝার চেষ্টা করছে এবং একই সাথে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ রোধে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
জার্মানিতে পাঁচ থেকে ১১ বছর-বয়সী শিশুদের টিকাদানের পরিকল্পনা এক সপ্তাহ এগিয়ে আনা হয়েছে।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ সেদেশে ২২ জনের দেহে অমিক্রনের সংক্রমণের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি সবাইকে বুস্টার টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ সরকার মঙ্গলবার থেকে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং সিঙ্গাপুর যাত্রী চলাচলের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
জাপান মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বিদেশিদের আগমন নিষিদ্ধ করেছে। আফ্রিকা মহাদেশের যাদের জাপানে থাকার বৈধ অনুমতি রয়েছে, তাদেরও সে দেশে যেতে বারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না আসতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিদেশ-ফেরত কারও মাধ্যমে বাংলাদেশে যেন অমিক্রন আসতে না পারে তার জন্য সরকার চেষ্টা করছে বলে বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন ।
অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি ছাত্র এবং দক্ষ কর্মীদের আসা বুধবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
গ্রিসে ষাটোর্ধ কেউ ভ্যাকসিন না নিলে তাদের মাসে মাসে জরিমানা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিটসোটাকিস ঘোষণা করেছেন।
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে এই জরিমানা চালু হবে বলে তিনি জানান।
গ্রিসে করোনায় যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগের বয়স ষাটের ওপরে।
ক্যানাডা, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসেও অমিক্রন রোগী ধারা পড়েছে।
ওদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বিচার না করেই কোন কোন দেশ সর্বাত্মক বিধিনিষেধ জারি করছে।
টেড্রস আধানাম গেব্রেইসাস বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার যেসব দেশ এই ভাইরাসের ব্যাপারে প্রথম হুঁশিয়ারি জানিয়েছে, তাদেরই শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা, রোগের তীব্রতা, পরীক্ষা ও ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে এখনও বহু প্রশ্ন রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অমিক্রন নিয়ে গবেষণা
ডাব্লিউএইচও আরও বলেছে ভ্রমণের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোন দেশ এই ভ্যারিয়েন্টের ঢোকা শুধু বিলম্বিত করতে পারবে, কিন্তু তা একেবারে ঠেকাতে পারবে না।
সংস্থার আপদকালীন আঞ্চলিক ডিরেক্টার ড. বাবাতুন্ডে ওলউকুরে বলেছেন, অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের গতিপ্রকৃতি বুঝতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশাল সংখ্যক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে বর্তমানে এক যোগে কাজ করছে। তবে এখনও পর্যন্ত তারা এমন কোন তথ্য পায়নি, যার জন্য এই মহামারি মোকাবেলায় এই মুহূর্তে নতুন দিক নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, প্রতিটি দেশ যেন তাদের নিজস্ব ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান পদক্ষেপগুলো জোরদার করে, যেমন: মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সংক্রমিতদের ট্রেস করা, আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখা এবং টিকাদান অব্যাহত রাখা।
ড. কাসাই স্কুল খোলা রাখার ঝুঁকিগুলো মূল্যায়ন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবার ওপরও জোর দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে অমিক্রনকে “উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট” ঘোষণা করা হয়।
ভাইরাসের এই ধরনটি আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর থেকে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বর্তমান টিকা এই ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কতটা কার্যকর হবে সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় নজিরবিহীন সংক্রমণ
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন সে দেশে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নজিরবিহীন মাত্রায় বাড়ছে।
মাত্র দু সপ্তাহ আগে যেখানে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল গড়ে তিনশয়ের সামান্য বেশি, সেখানে এখন প্রতিদিনি নতুন কোভিড শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে এগারো হাজারের বেশি।
জন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে মহামারির এই চতুর্থ ঢেউ আগের তুলনায় অনেক মারাত্মক রূপ নিয়েছে। নজিরবিহীন মাত্রায় সংক্রমণ বাড়ছে, তবে অমিক্রন আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী এমন প্রমাণ তারা এখনও পাননি বলে জানাচ্ছেন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রী, জো ফাহলা জন সাধারণকে টিকা নেবার অনুরোধ জানিয়েছেন।
জোহানেসবার্গ থেকে বিবিসির সংবাদদাতা পুমজা ফিলহানি জানাচ্ছেন দেশটির গাউতেং প্রদেশে, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সেখানে আগের ঢেউগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন এর কারণ কী তা তারা গবেষণা করে দেখছেন।